বিসর্গ (ঃ )-এর সঙ্গে স্বরধ্বনি কিংবা ব্যঞ্জনধ্বনির যে সন্ধি হয়, তাকে বিসর্গসন্ধি বলে। উচ্চারণের দিক থেকে বিসর্গ দু রকম :
১. র্-জাত বিসর্গ : শব্দের শেষে র্ থাকলে উচ্চারণের সময় র্ লোপ পায় এবং র্-এর জায়গায় বিসর্গ (ঃ) হয়। উচ্চারণে র্ বজায় থাকে। যেমন : অন্তর > অন্তঃ + গত = অন্তর্গত (অতোগতো)।
৬. স্-জাত বিসর্গ : শব্দের শেষে স্ থাকলে সন্ধির সময় স্ লোপ পায় এবং স্-এর জায়গায় বিসর্গ ( ঃ ) হয়। উচ্চারণে স্ বজায় থাকে। যেমন : নমস্ > নমঃ + কার নমস্কার ( নমোকার্ )।
বিসর্গসন্ধি দু-ভাবে সাধিত হয় :
১. বিসর্গ ( ঃ ) ও স্বরধ্বনি মিলে
২. বিসর্গ ( ঃ ) ও ব্যঞ্জনধ্বনি মিলে।
১. বিসর্গ ও স্বরধ্বনির সন্ধি
ক. অ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে অ-ধ্বনি থাকলে বিসর্গ ও অ-ধ্বনি স্থলে ও-কার হয়। যেমন :
ততঃ + অধিক = ততোধিক যশঃ + অভিলাষ = যশোভিলাষ
বয়ঃ + অধিক = বয়োধিক
খ. অ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে অ, আ, উ-ধ্বনি থাকলে বিসর্গ ও অ-ধ্বনি মিলে র হয়। যেমন :
পুনঃ + অধিকার = পুনরধিকার প্রাতঃ + আশ = প্রাতরাশ
পুনঃ + আবৃত্তি = পুনরাবৃত্তি পুনঃ + উক্ত = পুনরুক্ত
২. বিসর্গ ও ব্যঞ্জনধ্বনির সন্ধি
ক. অ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে বর্গের ৩য়/ ৪র্থ/ ৫ম ধ্বনি অথবা য, র, ল, হ থাকলে বিসর্গ ও অ-ধ্বনি স্থলে র-জাত বিসর্গে র/ রেফ (^) এবং স-জাত বিসর্গে ও-কার হয়। যেমন :
র-জাত বিসর্গ : র
অন্তঃ + গত = অন্তর্গত | পুনঃ + জন্ম = পুনর্জন্ম |
অন্তঃ + ধান = অন্তৰ্ধান | পুনঃ + বার = পুনর্বার |
অন্তঃ + ভুক্ত = অন্তর্ভুক্ত | পুনঃ + মিলন = পুনর্মিলন |
স-জাত বিসর্গ : ও
ক.
মনঃ + গত = মনোগত | সদ্যঃ + জাত সদ্যোজাত |
তিরঃ + ধান = তিরোধান | তপঃ + বন = তপোবন |
অধঃ + মুখ = অধোমুখ | মনঃ + যোগ = মনোযোগ |
মনঃ + রম = মনোরম | মনঃ + লোভা = মনোলোভা |
মনঃ + হর = মনোহর |
খ. বিসর্গের পরে চ/ছ থাকলে বিসর্গের স্থলে শ; ট/ঠ থাকলে ষ এবং ত/থ থাকলে স হয়। যেমন :
নিঃ + চয় = নিশ্চয় | শিরঃ + ছেদ = শিরশ্ছেদ |
দুঃ + চরিত্র = দুশ্চরিত্র | নিঃ + ছিদ্র = নিশ্ছিদ্র |
ধনুঃ + টঙ্কার = ধনুষ্টঙ্কার | নিঃ + ঠুর = নিষ্ঠুর |
চতুঃ + টয় = চতুষ্টয় | |
দুঃ + তর = দুস্তর | নিঃ + তেজ = নিস্তেজ |
ইতঃ + তত = ইতস্তত | দুঃ + থ = দুস্থ |
গ. অ/আ ভিন্ন অন্য স্বরের সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে স্বরধ্বনি, বর্গের ৩য় / ৪র্থ / ৫ম ধ্বনি অথবা য, র, ল, হ থাকলে বিসর্গ স্থলে র হয়। যেমন :
নিঃ + অবধি = নিরবধি | নিঃ + আপদ |
নিঃ + গত = নির্গত | নিঃ + ঘণ্ট - নির্ঘণ্ট |
নিঃ + বাক্ = নির্বাক | নিঃ + ভয় = নির্ভয় |
আবিঃ + ভাব = আবির্ভাব | আশীঃ + বাদ = আশীর্বাদ |
দুঃ + অবস্থা = দুরবস্থা | দুঃ + আচার দুরাচার |
দুঃ + গতি = দুর্গতি | দুঃ + বোধ = দুর্বোধ |
প্রাদুঃ + ভাব = প্রাদুর্ভাব | দুঃ + মর = দুর্মর |
দুঃ + যোগ = দুর্যোগ | দুঃ + লভ = দুর্লভ |
ঘ. র-জাত বিসর্গের পরে র থাকলে বিসর্গ লোপ পায় এবং প্রথম স্বর দীর্ঘ হয়। যেমন :
নিঃ + রব = নীরব | নিঃ + রস = নীরস |
নিঃ + রোগ = নীরোগ |
ঙ. অ/আ ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে ক, খ, প, ফ থাকলে বিসর্গ স্থলে স হয়। যেমন :
নমঃ + কার = নমস্কার | তিরঃ + কার = তিরস্কার |
পুরঃ + কার = | ভাঃ + কর = ভাস্কর |
চ. ই/উ ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে ক, খ, প, ফ থাকলে বিসর্গ স্থলে ষ হয়। যেমন :
নিঃ + কাম = নিষ্কাম | নিঃ + পাপ = নিষ্পাপ |
নিঃ + ফল = নিষ্ফল | বহিঃ + কার = : বহিষ্কার |
চতুঃ + পদ = চতুষ্পদ | চতুঃ + কোণ = চতুষ্কোণ |
আবিঃ + কার = আবিষ্কার | দুঃ + পাচ্য = দুষ্পাচ্য |
ছ. কোনো কোনো ক্ষেত্রে সন্ধির বিসর্গ লোপ পায় না। যেমন :
প্রাতঃ + কাল প্রাতঃকাল | মনঃ + কষ্ট = মনঃকষ্ট |
শিরঃ + পীড়া = শিরঃপীড়া | অন্তঃ + করণ অন্তঃকরণ |
জ. কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিসর্গ লোপ পেলেও সন্ধি হয় না। যেমন :
অতঃ + এর = অতএব |
বিসর্গ সন্ধির কিছু ব্যতিক্রম :
অহঃ + অহ = অহরহ | অহঃ + নিশা= অহর্নিশ |
আরও দেখুন...